Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

অপ্রচলিত জলজসম্পদের বাণিজ্যিক ব্যবহার ও সম্ভাবনা

অপ্রচলিত জলজসম্পদের বাণিজ্যিক ব্যবহার ও সম্ভাবনা
ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ
জলজসম্পদে আমাদের দেশ খুবই সমৃদ্ধ। আমাদের জলাশয়ে প্রায় ৮০০ প্রজাতির মিঠা ও লোনাপানির মাছ ও চিংড়ি রয়েছে। মিঠাপানির মাছ উৎপাদন বর্তমানে মূলত চাষ নির্ভর এবং লোনাপানির মাছ আহরণ নির্ভর। মৎস্য খাতের উন্নয়ন ভাবনায় আমরা প্রধানত মাছ ও চিংড়িকে বিবেচনা করে থাকি। কিন্তু মাছ ও চিংড়ি ছাড়াও আমাদের জলাশয়ে বৈচিত্র্যময় জলজসম্পদ রয়েছে। দেশের জলজসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বস¤পন্ন অপ্রচলিত জলজ প্রাণি যেমন-শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, কুচিয়া, কুমির, কচ্ছপ, পটকাসহ সামুদ্রিক প্রাণির উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রজনন, চাষ ও সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবি। আমাদের জলবায়ু ও পরিবেশ এসব প্রাণির প্রজনন ও প্রতিপালনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এসকল অপ্রচলিত কিন্তু অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ জলজসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের আমিষ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এতে দেশের অর্থনীতি একদিকে যেমনি সমৃদ্ধ হবে পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।


অপ্রচলিত মৎস্য বা জলজসম্পদ বিষয়ে গবেষণা এদেশে অত্যন্ত সীমিত। চাহিদা ও সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে অপ্রচলিত মৎস্যস¤পদ বিষয়ে গবেষণা জোরদার করা প্রায়োজন। অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদের বাণিজ্যিক ব্যবহার ও সম্ভাবনার বিষয়ে নিম্নে আলোকপাত করা হলো।


শামুক-ঝিনুক চাষ
বাংলাদেশে শামুকের প্রায় ৪৫০টি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে যে দুটি প্রজাতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তা হলো
Pila globosa (আপেল শামুক)  ও Viviparus bengalensis (পন্ড স্নেইল)। সাধারণত শামুকের মাংসল অংশ খাদ্য হিসেবে ব্যবহƒত হয়ে থাকে। মানুষ ও মাছের খাদ্য হিসেবে শামুকের চাহিদা থাকায় বাংলাদেশে শামুক চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।


বাংলাদেশের স্বাদু এবং লবণাক্ত পানিতে প্রায় ১৬ প্রজাতির ঝিনুক পাওয়া যায়। সুদূর অতীত থেকে ঝিনুক হতে মুক্তা আহরণ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক এবং মনুষ্য সৃষ্ট কারণে জলাশয়ে ঝিনুকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঝিনুকে আর আগের মত মুক্তা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিমভাবে স্বাদুপানির ঝিনুক থেকে মুক্তা উৎপাদন  কৌশল উদ্ভাবন করেছে। বিশেষ কৌশলে ঝিনুকে মেন্টাল টিস্যু ঢুকিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গভীরতার পুকুরে লালন করা হয়। এতে ৮-১০ মাসেই ঝিনুকে ২ থেকে ৩ মিলিমিটার সাইজের মুক্তা উৎপাদিত হয়- যা রাইস পার্ল নামে পরিচিত। এ ছাড়া ঝিনুকে বিভিন্ন ধরনের ইমেজ মুক্ত উৎপাদন প্রযুক্তিও ইতোমধ্যে ইনস্টিটিউট থেকে উদ্ভাবন করা হয়েছে। প্রযুক্তিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মৎস্যচাষি বিশেষত গ্র্রামীণ মহিলাদের মাঝে সম্প্রসারিত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জলজ পরিবেশে ভারসাম্য বজায় রাখা ও শামুক-ঝিনুকের চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে শামুক-ঝিনুক চাষ বিষয়ক একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া সাগর উপকূলে প্রাপ্য শামুক-ঝিনুক আহরণ বা চাষের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব।


কাঁকড়া চাষ
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে কাঁকড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কাঁকড়া
(Mud crab, Scylla spp.) দেশের উপকূলীয় এলাকা হতে বহির্বিশ্বে রপ্তানি করা হয়। কাঁকড়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটি গত এক দশকের অধিক সময় ধরে  কাঁকড়ার ওপর গবেষণা করে ফ্যাটেনিং কৌশল উদ্ভাবন করেছে যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফ্যাটেনিং করা কাঁকড়া চীন, হংকং, তাইওয়ানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইনস্টিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি এবং লোনাপানি কেন্দ্র হতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে প্রাথমিক সফলতা অর্জিত হয়েছে।
কুচিয়া চাষ
সাধারণ জনগোষ্ঠীর কাছে কুচিয়া মাছের গুরুত্ব না থাকলেও দেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে এই মাছ ব্যাপক জনপ্রিয়। পুষ্টিমান বিবেচনায় কুচিয়ায় পুষ্টির পরিমাণ অন্যান্য মাছের তুলনায় অনেক বেশি। রক্ত শূন্যতা দূরীকরণ, উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে কুচিয়া মাছ খুবই উপকারী। এদেশে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে যে কুচিয়ার প্রজাতি পাওয়া যায়, সেটি হলো
Monopterus cuchia উপযুক্ত পরিবেশে নিয়ন্ত্রিত প্রজনন ও চাষাবাদ করতে পারলে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক উৎস থেকে কুচিয়া আহরণের পরিমাণ কমবে তেমনি দেশে কুচিয়ার উৎপাদন বাড়বে। প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রিত প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কুচিয়ার পোনা উৎপাদন কৌশল বিএফআরআই থেকে ইতোমধ্যে উদ্ভাবন করা হয়েছে।
 

কচ্ছপ চাষ
বাংলাদেশে প্রায় ২৫ প্রজাতির কচ্ছপ আছে। তবে এদের মধ্যে ১১টি প্রজাতি মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহƒত হয়। এদেশে বিদ্যমান কচ্ছপের বিভিন্ন প্রজাতিসমূহের মধ্যে নরম খোলসধারী কচ্ছপ
(Aspiderestes gangeticus, A. huruma and Lissemys punctata)   চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। প্রণোদিত প্রজনন ও চাষ কৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে কচ্ছপের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কচ্ছপ চাষ অনেকাংশে কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত বাঁচ্চা ও সম্পূরক খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই এ চাষ ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কচ্ছপের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও সম্পূরক খাদ্য তৈরির কৌশল বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন।


কুমির চাষ
বর্তমানে বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমির পাওয়া যায়, মিঠাপানির কুমির
(Crocodylus palustris), লোনাপানির কুমির (Crocodylus porosus) এবং ঘড়িয়াল (Gavialis gangeticus)| IUCN এর বাংলাদেশ রেড লিস্ট অনুসারে মিঠাপানির কুমির এখন বিলুপ্তপ্রায়, অপর ২টি প্রজাতিও বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে উদ্যোক্তা পর্যায়ে ময়মনসিংহ, কক্সবাজার ও বান্দরবনে ৩টি কুমিরের খামার গড়ে উঠেছে। প্রায় এক দশক পূর্বে মালয়েশিয়া থেকে আমদানীকৃত মিঠাপানির কুমির দেশে চাষ ও প্রজননের মাধ্যমে এখন রপ্তানি করা হচ্ছে। কুমিরের শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। কুমিরের মাংস খাদ্য হিসেবে, চামড়া থেকে ব্যাগ, পার্স ও বেল্ট, হাড় থেকে সুগন্ধি, দাঁত থেকে গহনা এবং চোয়াল চাবির রিং তৈরিতে ব্যবহƒত হয়।


সাগর উপকূলে সী-উইড চাষ
সী-উইড সাগরের এক প্রকার তলদেশীয় জলজ উদ্ভিদ। সী-উইড বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ সম্পদ, পুষ্টিগুণের বিচারে যা বিভিন্ন দেশে খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, কেবল সেন্টমার্টিন নয় কক্সবাজার উপকূলের অনেক স্থানে সী-উইড চাষ সম্ভব। ইনস্টিটিউট পারিচালিত গবেষণা ফলাফল ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের উপকূলে সী-উইড চাষের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।


লবস্টার, স্কুইড আহরণ ও মূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদন
লবস্টার একটি মূল্যবান আকর্ষণীয় সামুদ্রিক খাদ্য। স্কুইড আমরা না খেলেও বিদেশে এদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত স্কুইড প্রজাতির মধ্যে
Loligo edulis প্রজাতিটি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ । স্কুইড মেদ কমায়, হাড় মজবুতসহ আর্থ্রাইটিস দূর করে। প্রতি ১০০ গ্রাম স্কুইডে প্রায় ৯২ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। মূল্য সংযোজিত পণ্য হিসেবে এদের আহরণ ও বাজারজাতকরণ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের আলোচিত নীল-অর্থনীতিতে এ ধরনের মৎস্যস¤পদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
 

রাজ কাঁকড়া
সামুদ্রিক আর্থোপড রাজ কাঁকড়া ষরারহম ভড়ংংরষ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে ২ প্রজাতির রাজ কাঁকড়া 
(Carcinoscorpius rotundicauda এবং Tachypleus gigas) পাওয়া যায়। রাজ কাঁকড়ার রক্তে হিমোগ্লোবিন থাকে না, নীল রক্তে ধসবনড়পুঃবং নামক বিশেষ রোগ বিনাশী উপাদান থাকে। যে কারণে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে বাণিজ্যিকভাবে রাজ কাঁকড়ার চাষ ও পরিচর্যা করা হয়। মূলত রক্ত সংগ্রহের পর এদের সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঔষধি গুণাবলী ছাড়াও রাজ কাঁকড়ার ডিম একটি মূল্যবান খাবার। রাজ কাঁকড়া থেকে টেট্রডোটক্সিন আহরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা যায়। অ্যানেসথেসিয়ায় টেট্রডোটক্সিন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং উচ্চমূল্যে তা বাজারে বিক্রয় হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ করা গেলে রাজ কাঁকড়া দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে।


পটকা মাছ
আমাদের দেশে পটকা মাছ
(Puffer fish) স্বাদুপানি ও  লোনাপানিতে পাওয়া যায়। পটকা মাছ সাধারণত টেট্রোডক্সিন (Tetrodotoxin-TTX) নামক বিষ বহন করে। পটকা মাছের বিষাক্ততা এলাকা ও ঋতুভেদে ভিন্নতর হয়। পটকা মাছ খেয়ে আমাদের দেশে অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। অথচ অনেক সামুদ্রিক পটকা জাপান, কোরিয়া ও চীনে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও দামি মাছ হিসেবে পরিচিত। তাই সামুদ্রিক পটকা চাষ করে বিদেশে রপ্তানি করা যায়।  তাছাড়া, বিষাক্ত পটকা মাছের বিষ (TTX) অত্যন্ত দামি ও মেডিক্যাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তাই পটকা মাছের বিষ পৃথক (Isolate) করে বিদেশে রপ্তানি করা যায়।

মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ, মোবাইল নম্বর : ০১৬৭৬১৩৩৪৬৫, ই-মেইল : dgbfri@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon